রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

মাহিন্দ্রা চালককে হত্যার দায়ে সাবেক খাদ্যমন্ত্রীসহ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ ও গোমস্তাপুর  থানা ওসি চৌধুরীর জোবায়ের আহমেদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

মোঃ সোহেল আমান রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান অগ্নিশিখা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক মাহিন্দ্রা চালককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ হত্যাকান্ডে জড়িত স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) দুপুরে জুমা নামাজ শেষে গোমস্তাপুর পার্বতীপুর ইউনিয়নের আড্ডা-শেরপুর গ্রামে এই মিছিল ও সমাবেশ হয়।
স্থানীয় শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর আয়োজনে শেরপুর জামে মসজিদের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আড্ডা বাজারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে মামলায় প্রভাব বিস্তার করে আসামীদের আটক করতে না দেয়া ও তদন্ত কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মামলার বাদি ও হত্যার স্বীকার মাহিন্দ্রা চালক জয়নাল আবেদীনের ভাই মো. শাহিন, ফুফাতো ভাই হাবিবুর রহমান, পশ্চিম শেরপুর জামে মসজিদের ইমাম রমজান আলী, স্থানীয় বাসিন্দা তোফাজ্জাল হোসেন, আব্দুর রহিম, মো. জাকারিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মামলার বাদি ও হত্যার স্বীকার মাহিন্দ্রা চালক জয়নাল আবেদীনের ভাই মো. শাহিন বলেন, রাতের অন্ধকারে একজন সাধারণ মাহিন্দ্রা চালককে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় আ.লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীরা। হত্যার পরদিন ১১টি দোকান ও বাড়ি থেকে গরু-ছাগল লুটপাট করে হত্যাকারীরা। এই হত্যাকান্ডের প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ৩৫ জন আসামীর কোন একজন আসামীকেও আটক করেনি পুলিশ। উল্টো এখনও আসামীরা নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে নিহতের পরিবারের সদস্যদের।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আসামী না ধরার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানারকম ষড়যন্ত্র করেছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলার আসামীদেরকে আটক না করে পুলিশ তাদের সাথেই সখ্যতা গড়ে তুলতে। বারবার থানায় গিয়েও কোন সুরাহা পায়নি। আসামী ধরে আদালতে হাজির করার জন্য আমাদের কোন অনুরোধ শুনতেই চাইনি গোমস্তাপুর থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ।
বক্তারা বলেন, নওগাঁর নেয়ামতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোতালিব হোসেন বাবরের নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ড হয়। তিনি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ঘনিষ্ঠ সহচর। যার প্রভাবে ক্ষমতার দাপটে আসামী ধরেনি ও কোনরকম তদন্ত করেনি পুলিশ। উল্টো আসামীদের সাথে বিভিন্ন পিকনিকে অংশ নিতে দেখা গেছে। খাদ্য মন্ত্রীর ক্ষমতায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আটক করেনি গোমস্তাপুর থানা পুলিশ।
জানা যায়, হত্যা মামলার প্রধান আসামী তরিকুল ইসলাম নওগাঁর নেয়ামতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোতালিব হোসেন বাবরের চাচা। বাবরসহ হত্যা মামলার অন্য আসামীদের মধ্যে রয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বাবু, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মিলন রেজা, উপজেলা কৃষকলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মুনি, নওগাঁর নেয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মতিনসহ অন্যান্যরা।
তবে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেন গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ। তিনি আরও বলেন, মামলায় আসামীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে আটটার দিকে শেরপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার ফসলী জমিতে নিয়ে গিয়ে মাহিন্দ্রা চালক জয়নাল আবেদিনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আ.লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী। দুইদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন জয়নাল আবেদিন। নিহত জয়নাল আবেদীন শেরপুর গ্রামের মো. মাহবুবুর রহমানের ছেলে। পরে যুবলীগ নেতা বাবরসহ ৩৫ জনকে আসামী করে গোমস্তাপুর থানায় মামলা করেন নিহত জয়নাল আবেদীনের ভাই মো. শাহিন।

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com